Tuesday, February 16, 2016

রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা’—এটি একটি সাংবিধানিক বিধান। এই ভাষারাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রাত্যহিক কাজ কর্ম হবে বাংলায়। কিন্তু সেটি অনুসরণ করা হচ্ছে না। তার বহু কারণ রয়েছে। বাংলা ভাষা সম্পর্কে যথার্থ ভালোবাসা ও অঙ্গীকার নেই আমাদের। একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষক-কর্মচারিদের জন্য ছুটির আবেদনের যে ফরম রয়েছে সেটি ইংরেজিতে। আবার বিভাগে বিভাগে দাফতরিক সিদ্ধান্ত বা বিভিন্ন সংবিধি (অর্ডিনেন্স) জারির ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয় ইংরেজি। অথচ এগুলো ইংরেজিতে হওয়ার কোনো দরকার ছিল না। এখানেই পরিষ্কার যে, বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের অঙ্গীকার যথেষ্ট বা দৃঢ় নয়। সর্বত্র বাংলা ব্যবহারের যে কথা আমরা বলে বা শুনে আসছি, সেটিও কার্যকর হচ্ছে না। যেমন, আদালতের রায় বাংলায় লেখার যে দাবি দীর্ঘদিন ধরে ওঠে আসছে, তাও কার্যকর হচ্ছে না। আদালতের ভাষা যদি বাংলায় হয় কিংবা রায় যদি লেখা হয় বাংলায়, তাহলে বিচারপ্রার্থীসহ শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই রায়ের মর্মটি ভালোভাবে বুঝতে পারে। এখানে সবাইতো বাঙালি। দুয়েকটি মামলা হয়তো রয়েছে বিদেশিদের। বাংলা ভাষায় রায় যে লেখা হয়নি এমনতো নয়। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত’ মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের রায় বাংলায় লিখে বিচারপতি খায়রুল হক দৃষ্টান্ত রেখেছেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানও বলেছিলেন—উচ্চ ও নিম্ন আদালতে মামলার রায় বাংলায় হোক। কিন্তু হচ্ছে না। এটা এমন কোনো কঠিন কাজও নয়। আবার এমনো নয় যে, আমরা বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা শিখব না বা ব্যবহার করব না। আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমাদের ইংরেজি ভাষা জানার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি। কিন্তু তাই বলে দেশের ভিতরে যত্রতত্র ইংরেজি বলতে হবে কেন? আমাদের দেশের একটি অংশ ইদানীং বাংলা ভাষায় কথা বলতে বা বাংলা মাধ্যমে শিক্ষালাভ করতে হীনমন্যতায় ভোগে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতিচর্চা না করে অন্যের ভাষা-সংস্কৃতিচর্চায় কী লাভ, কী সুখ আছে, তা আমাদের বোধে আসে না। সাময়িক লাভ-সুখ হয়তো আছে। কিন্তু তার জন্য তো নিজের মাতৃভাষাকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা-অবহেলা করা যাবে না! অনেকেরই হয়তো ধারণা যে, ইংরেজি ভাষার চর্চা যে হারে বেড়েছে এবং আকাশ সংস্কৃতির কারণে ইদানীং হিন্দি ভাষার যে প্রভাব পড়ছে বাংলা ভাষীদের উপর, তাতে বাংলা ভাষা একদিন হারিয়ে যাবে। এ ধরনের ধারণা বা আশঙ্কা একেবারেই অমূলক। তার কারণ হচ্ছে— বাংলা ভাষার নিজস্ব যে শক্তি, তা অনেক বেশি শক্ত। কারণ এই ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে অনেকগুলো ভাষার সংমিশ্রণে। এর ব্যাকরণিক কাঠামো কখনো ক্ষুণ্ন হবার নয়। আমাদের এখন জরুরি হচ্ছে—বাংলা ভাষার প্রতি, দেশের প্রতি নিবিড় ভালোবাসা ও দৃঢ় অঙ্গীকার। লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা’—এটি একটি সাংবিধানিক বিধান। এই ভাষারাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রাত্যহিক কাজ কর্ম হবে বাংলায়। কিন্তু সেটি অনুসরণ করা হচ্ছে না। তার বহু কারণ রয়েছে। বাংলা ভাষা সম্পর্কে যথার্থ ভালোবাসা ও অঙ্গীকার নেই আমাদের।     একটি উদাহরণ দিয়ে বলা যায়—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের শিক্ষক-কর্মচারিদের জন্য ছুটির আবেদনের যে ফরম রয়েছে সেটি ইংরেজিতে। আবার বিভাগে বিভাগে দাফতরিক সিদ্ধান্ত বা বিভিন্ন সংবিধি (অর্ডিনেন্স) জারির ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয় ইংরেজি। অথচ এগুলো ইংরেজিতে হওয়ার কোনো দরকার ছিল না। এখানেই পরিষ্কার যে, বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের অঙ্গীকার যথেষ্ট বা দৃঢ় নয়। সর্বত্র বাংলা ব্যবহারের যে কথা আমরা বলে বা শুনে আসছি, সেটিও কার্যকর হচ্ছে না। যেমন, আদালতের রায় বাংলায় লেখার যে দাবি দীর্ঘদিন ধরে ওঠে আসছে, তাও কার্যকর হচ্ছে না। আদালতের ভাষা যদি বাংলায় হয় কিংবা রায় যদি লেখা হয় বাংলায়, তাহলে বিচারপ্রার্থীসহ শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই রায়ের মর্মটি ভালোভাবে বুঝতে পারে। এখানে সবাইতো বাঙালি। দুয়েকটি মামলা হয়তো রয়েছে বিদেশিদের। বাংলা ভাষায় রায় যে লেখা হয়নি এমনতো নয়। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত’ মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের রায় বাংলায় লিখে বিচারপতি খায়রুল হক দৃষ্টান্ত রেখেছেন। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানও বলেছিলেন—উচ্চ ও  নিম্ন আদালতে মামলার রায় বাংলায় হোক। কিন্তু হচ্ছে না। এটা এমন কোনো কঠিন কাজও নয়।
আবার এমনো নয় যে, আমরা বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষা শিখব না বা ব্যবহার করব না। আন্তর্জাতিক সমাজের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমাদের ইংরেজি ভাষা জানার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি। কিন্তু তাই বলে দেশের ভিতরে যত্রতত্র ইংরেজি বলতে হবে কেন? আমাদের দেশের একটি অংশ ইদানীং বাংলা ভাষায় কথা বলতে বা বাংলা মাধ্যমে শিক্ষালাভ করতে হীনমন্যতায় ভোগে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতিচর্চা না করে অন্যের ভাষা-সংস্কৃতিচর্চায় কী লাভ, কী সুখ আছে, তা আমাদের বোধে আসে না। সাময়িক লাভ-সুখ হয়তো আছে। কিন্তু তার জন্য তো নিজের মাতৃভাষাকে কোনোভাবেই অবজ্ঞা-অবহেলা করা যাবে না! অনেকেরই হয়তো ধারণা যে, ইংরেজি ভাষার চর্চা যে হারে বেড়েছে এবং আকাশ সংস্কৃতির কারণে ইদানীং হিন্দি ভাষার যে প্রভাব পড়ছে বাংলা ভাষীদের উপর, তাতে বাংলা ভাষা একদিন হারিয়ে যাবে। এ ধরনের ধারণা বা আশঙ্কা একেবারেই অমূলক। তার কারণ হচ্ছে— বাংলা ভাষার নিজস্ব যে শক্তি, তা অনেক বেশি শক্ত। কারণ এই ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে অনেকগুলো ভাষার সংমিশ্রণে। এর ব্যাকরণিক কাঠামো কখনো ক্ষুণ্ন হবার নয়। আমাদের এখন জরুরি হচ্ছে—বাংলা ভাষার প্রতি, দেশের প্রতি নিবিড় ভালোবাসা ও দৃঢ় অঙ্গীকার।

লেখক : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা
- See more at: http://www.bd-pratidin.com/special/2016/02/16/127426#sthash.5Rf6aQNV.dpuf

No comments:

Post a Comment