Tuesday, August 01, 2017

চলনবিলে সরগরম নৌকার হাট(ভিডিও)

বর্ষায় পানিতে ভরেছে খাল বিল, ভরেছে নদ-নদী। বিলাঞ্চলের পথঘাটও এখন পানির নিচে। চলনবিলের মানুষের কাছে তাই কদর বেড়েছে নৌকার। বিলপাড়ের কাঠমিস্ত্রিরা ব্যস্ত নৌকা তৈরিতে, ক্রেতা বিক্রেতায় সরগরম বিল পাড়ের নৌকার হাটগুলো।
জলবায়ু পরিবর্তনে একসময় বারোমাস পানিতে টইটম্বুর চলনবিল এখন বছরের বেশির ভাগ সময়ই রূপ নেয় শুষ্ক, মরা খালে। বিলের জলে নৌকা ভাসাতে মাঝি-মাল্লা আর জেলেরা থাকেন বর্ষার পথ চেয়ে। আষাঢ়-শ্রাবণে তাই বিলপাড়ের ছেলে বুড়ো সবার মনেই যেন ভর করে জলের নেশা।
দেশের সবচেয়ে বড় এই বিলটিতে এখর শ্রাবণের যৌবন। খরা মৌসুমের শুষ্কতা পেরিয়ে এই বর্ষায় কানায় কানায় পানির পসরা সাজিয়ে বসেছে চলনবিল।
পানিতে থৈ থৈ পথ-ঘাট, খালবিল একাকার। পারাপার আর মাছ ধরায় চাই নৌকা। তাই সারা বছর অবহেলায় থাকা পুরনো নৌকাটি পেরেক ঠুকে, আলকাতরা মেখে চলছে ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা। কেউ ছুটছেন নৌকার হাটে।
পাবনার চাটমোহরের চিনাভাতকুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, মানুষের ব্যস্ততা। মৎসজীবী অধ্যুষিত গ্রামটির ব্যস্ততা দেখে মনে হয় যেন চলছে উৎসব আয়োজন।
কথা হল এ গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মৎসজীবী নিতাই হালদারের সঙ্গে। তিনি জানালেন, গত বছর কেনা নৌকাটি বাড়ির উঠোনে যত্নে তুলে রেখেছেন তিনি। বিলে বর্ষার পানি এসেছে। নতুন পানিতে মাছ ধরবেন। তাই নৌকাটি বের করে ছোটখাট সমস্যা ঠিক করে নিচ্ছেন।
বাজারের চহিদায় যেন দম ফেলার ফুসরত নেই কারিগরের। পাবনার চাটমোহরের মির্জাপুর, হান্ডিয়াল, নুরনগর, নাটোরের গুরুদাসপুর, মান্নান নগর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ; বিলপাড়ের কাঠমিস্ত্রি সবাই ব্যস্ত নৌকা তৈরিতে।
সপ্তাহে একদিন করে এসব এলাকায় বসছে নৌকার হাট। আকার ও প্রকার ভেদে বিক্রেতারা নৌকার দাম হাঁকছেন দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ক্রেতারা বলছেন দাম বেড়েছে, তবে বিক্রেতাদের দাবি কাঠ ও শ্রমিকের দাম বাড়াতেই এ মূল্যবৃদ্ধি।
চাটমোহর উপজেলার মির্জাপুর হাটে গিয়ে দেখা গেল, নৌকার বিকিকিনি। কথা হল কয়েকজন ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে।
চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া গ্রাম থেকে নৌকা কিনতে আসা সদর উদ্দিন জানান, এ বছর বর্ষার শুরুতেই যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তাতে বিগত বছরের চেয়ে এবার চলনবিলে পানি বেশি। নিচু এলাকার সড়কগুলো এরই মাঝে পানিতে ডুবে গেছে। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যেতে ডিঙি নৌকার প্রয়োজন।
আরেক ক্রেতা আলী আকবর জানালেন, বর্ষাকালে হাতে কাজ থাকে না। তাই মাছ ধরে বাড়তি আয় করতেই হাটে এসেছেন ডিঙি নৌকা কিনতে। প্রতিটি ডিঙি নৌকা দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।



নৌকা ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জানালেন, গত কয়েক বছর নৌকা ব্যবসায় মন্দা গেছে। এবার বিলে পানি থাকায় নৌকার চাহিদা বাড়ছে। দিনরাত কাজ করেও নৌকা তৈরির কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। কাঠমিস্ত্রিদের মজুরি ও কাঠের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বছর নৌকার দাম বেড়েছে।
কাঠমিস্ত্রি আব্দুল মান্নান জানান, প্রতিটি ডিঙি নৌকার জন্য ৩’শ টাকা মজুরি পান। দিনে ২টি করে ডিঙি নৌকা তৈরি করা যায়। চলনবিল এলাকার হাটগুলোতে প্রতি হাটবারে গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার নৌকা বিক্রি হয়। 


https://www.youtube.com/watch?v=sPIwCmTuJtg

No comments:

Post a Comment